বইয়ের চাপে কুঁজো শিশুরা !

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৭:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৫৮ অপরাহ্ণ

সাহাদাত হোসেন

school 3
সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে ওঠে নয় বছর বয়সী তমা। সাতটায় স্কুলের ক্লাস শুরু। শেষ হয় দুপুর ১২টা নাগাদ। স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে বেজে যায় প্রায় একটা। গোসল-খাওয়া সেরেই ছুটতে হয় কোচিংয়ে। বাসায় ফেরা সন্ধ্যার আগে আগে। দিনে কেটে যায় এভাবেই। সন্ধ্যা নামার পরপরই আসেন গৃহশিক্ষক। পড়া শেষ হতে হতে সাড়ে আটটা-নয়টা। রাতের খাওয়া, স্কুলের পড়া। একটু টিভি দেখে ঘুমাতে যেতে যেতে ১২টা। সপ্তাহে ছয় দিন এভাবেই ছোটাছুটি পড়াশোনা নিয়ে।
শুধু তমা নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় নগরগুলোর বেশির ভাগ শিশুর রুটিন অনেকটা এ রকমই। অবসর বলে কিছু নেই। যেটুকু অবসর পাওয়া যায় তা চলে যায় কম্পিউটারে গেম খেলা, কার্টুন বা টিভি দেখায়। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য মুক্ত বাতাসে খেলাধুলা ও বিনোদন জরুরি। অনেক অভিভাবকই এ নিয়ে চিন্তিত হলেও এর কোনো সুরাহা নেই যেন।
পাঠ্যপুস্তক এবং আরও পাschool 1ঠ্য বই খুব কম শিশুই নিজের ব্যাগ নিজে বহন করে স্কুলে নিয়ে যায়। বইয়ের চাপে ব্যাগ এতটাই ভারী থাকে যে, শিশুর পক্ষে তা বহন করা সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে কিন্ডারগার্টেনের শিশুরা কতগুলো বই পড়বে, সিলেবাস কেমন হবে, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষের ওপর।
জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নির্ধারিত বইয়ের পাশাপাশি সেখানে আরও অনেক বই পড়ানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই বেশি বইয়ে চাপের পরিমাণও বেশি।
রাজধানীর ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান মনে করেন,‘শিশুদের পড়াশোনার চাপের জন্য অনেকটাই দায়ী অতিরিক্ত বই। শুধু কিন্ডারগার্টেনই নয়, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোসহ অনেক বড় স্কুলেই পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বইয়ের চেয়ে অতিরিক্ত আরও অনেক বই পড়ানো হয়, যা শিশুদের পড়াশোনায় চাপ সৃষ্টি করে।’
বয়সের তুলনায় শিশুকে বেশি ভারী স্কুলব্যাগ বহন করতে হচ্ছে ও বয়সের তুলনায় শিশুকে বেশি বই পরতে হচ্ছে। যার কারনে শিশুর মধ্যে তৈরি হচ্ছে মানসিক সমস্যা, ব্যাগ হচ্ছে ভারি, তেমনি এই ভারী ব্যাগ বহন করতে গিয়ে সে পড়ছে শারীরিক ঝুঁকিতেও। এই ঝুঁকি শুধু শিশু বয়সে নয়, তাকে মেরুদণ্ড, ঘাড়ব্যথা, পিঠব্যথাসহ কিছু অসুখের ঝুঁকিতে ফেলছে সারা জীবনের জন্য।
কোনো কোনো গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বয়ঃসন্ধিকালে যেসব শিশু পিঠে ব্যাথাজনিত সমস্যায় পড়ে তারা বেশি বয়সে ঘাড়, কাঁধ ও মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার মতো ব্যথার জটিলতায় ভোগে।
school 2
শিশুর পিঠ ব্যথার সঙ্গে স্কুলব্যাগ ওজনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
এর মধ্যে আর্কাইভস অব চিলড্রেনে একটা গবেষণাপত্রে দেখা গেছে ,ভারী স্কুলব্যাগ বহনকারী শিশুদের মধ্যে যারা অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগ বহন করছে তারা বেশি সমস্যায় পড়ছে।
বিভিন্ন বয়সী দুই হাজার ২১৩৫ জন শিশুর ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাগের গড় ওজন ছিল সাত কেজি। ৬১.৪ শতাংশ শিশুর স্কুলব্যাগ ওজন তার নিজ ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ছিল। ১৮.১ শতাংশ শিশু নিজ ওজনের ১৫ শতাংশের বেশি ওজনের স্কুলব্যাগ ব্যবহার করত। পরে এসব শিশুর প্রায় ২৬ শতাংশ পিঠে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে গবেষকদের কাছে এসেছে।
এমনিতে বলা হয়, স্কুলব্যাগ হোক আর সাধারণ ব্যাগ হোক-তা একটি শিশুর মোট ওজনের ১০ ভাগের বেশি হতে পারবে না। পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশুর ওজন যদি ১৫ কেজি হয়, তবে তার স্কুলব্যাগের ওজন যেন অবশ্যই ১.৫ কেজির নিচে থাকে।
সঠিক দিকনির্দেশনা শিশুকে আগামী দিনের একজন সফল মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পারে, তেমনি ভুল নির্দেশনাও একটি শিশুকে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই সন্তানের যত্ন নিন, পড়াশোনার জন্য কেবল চাপ না দিয়ে তাকে পড়তে উৎসাহিত করুন। শিক্ষার আলোকোজ্জ্বল পৃথিবী আপনার শিশুকে স্পর্শ করুক।  ভালো থাকুক, ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠুক প্রতিটি শিশু।
 প্রতিক্ষণ/এডি/এফজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G